Sunday 26 February 2017

Bangla Choti – গোপন রাখতে চাই

রাতে খাবার টেবিলে সবাই
অনেকদিন পর একত্র হলো।
পরিবারের সকল লোকজন। শুধু পিসিমা
নেই। আর নেই অঞ্জলী। তবে এখানে যা কিছু ঘটছে
তার রানিং কমেন্ট্রি
পাচ্ছে অঞ্জলী বন্যার কাছ
থেকে। রোহিত এখন পরিবার
প্রধান। বয়সের তুলনায় একটু
বেশী বুড়িয়ে গেছে। তাকে বেশ চিন্তিত আর বিমর্ষ
দেখাচ্ছে। মনি শংকর বেশ
একটু গম্ভীর। বাদবাকী
সবাই খুব হ্যাপী মুডে আছে।
কথার খই ফুটছে বন্যার মূখে । অমিত হাসিখুশী। আগের মতই
কম কথা বলা মানুষ।
পরিবারের সান্নিধ্য উপভোগ
করছে। বড় বৌদি নিজের
হাতে অনেকগুলি আইটেম
করেছেন। আহ কি অপূর্ব স্বাদ! টেবিলের এক মাথায়
অমিত। তার দুপাশে রোহিত
আর মনি শংকর। মনি শংকরের
পাশে বিন্দু আর রোহিতের
পাশে বন্যা। মঞ্জু বসেনি।
সে খাবার তদারক করছে। হরবর করার মাঝখানে খুব
গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু সামনে
নিয়ে এল বন্যা। “আচ্ছা বাবা, তোমরা এমন
হাড় কেপ্পন কেন গো? আমার
ছেলেটা যে এত বড় হলো তার
বিয়ে থা দেবার নাম করছো
না?” দেখার পর থেকেই
বন্যা ঘোষণা দিয়েছে অমিত তার ছেলে। “বেশ তো ছেলেকে কাছে
পেয়েছ এখন থেকে তুমিই না
হয় যোগাড় যন্ত্র করো?”
রোহিত হেসে জবাব দেয়। “সেই ভাল। আমি আর ছোট মা
মিলে এক মাসের মাঝে আমার
ছেলের বিয়ে দেব।” বন্যা
বিন্দুকে ছোট মা বলে ডাকে।
বিন্দুর সন্তানাদি নেই।
বন্যাকে সে সন্তানের মত স্নেহ করে। আর বন্যা তো মার
চেয়ে ছোট মাকেই বেশী
জানে। এখন আলাদা আলাদা
ফ্লাট হয়ে যাওয়ায় ছোট
মাকে ভীষন মিস করে বন্যা। রোহিত বার দুই গলা খাকারী
দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ
করলো। তার পর বললো,
“অমিত, আমরা আমাদের
সহায়-সম্পদ ভাগ করে
নিয়েছি। বলা যায় ঠাকুরমা নিজের হাতে ভাগ করে দিয়ে
গেছেন। তোর ভাগে আছে রায়
ইলেক্ট্রনিক্স আর রায়
টেক্সটাইল মিলস। তোর
দেয়া পাওয়ার অব এটর্নীতে
আমি এ গুলি চালাচ্ছি। আমি চাই তুই তোর সম্পদ বুঝে নে।” “বড়দা এসব মিল
ফ্যাক্টরীতে আমি আগেও
ছিলাম না এখনও নেই।
কদিনের জন্য বেড়াতে
এসেছি আমার মত থাকতে
দে।” অমিত নিস্পৃহ। রুই মাছের মুড়ো টা মনি শংকরের পাতে তুলে দিল
অমিত। “না না বড়দা ঠিকই বলেছে,”
মনি শংকর প্রতিবাদ করে,
“তুই তোর কোম্পানী বুঝে নে।
বড় দার বয়স হয়েছে। আমি
যতটুকু জানি কোম্পানীগুলির
পজিশন তেমন ভাল না।” মাছের কাঁটা বেছে অমিতের
পাতে দেয় মনি শংকর। খুব
ছোট বেলা থেকেই অমিত কে
মাছের কাটা বেছে দেয় সে। “হ্যা অমিত, আমি নানান
দিকে মন দিতে গিয়ে
ব্যবসটা ভাল চালাতে
পারছি না। তুই এবার একটু
দেখ ভাই।” রোহিত আবারও
বলে। “তোমরা কি শান্তিমত
ছেলেটাকে খেতে দেবে না
ব্যবসা করবে?’ এবারে বেশ
তেতে উঠে মঞ্জু। ডিনারের পর মনি শংকর আর
বিন্দু চলে যায়। ঠিক হয়
রাতে স্পেশাল গেস্ট রুমে
থাকবে অমিত। যাবার আগে
মেজ বৌদি অমিতের ঘরে
ঢুকে। অমিত আধশোয়া হয়ে ছিল। বিন্দুকে দেখে সোজা
হয়ে বসে। বিন্দু
বিছানাতেই বসে অমিতের
পাশে। “তা রাজা বাবুর কি বিয়ে থা
করার ইচ্ছে আছে না লিভিং
টুগেদার করেই জীবন
কাটিয়ে দেবে?” “কি সব যা তা বলছ বৌদি?”
অমিতের ফর্সা চেহারা
লজ্জায় লাল হয়ে যায়। “যা তা হলে তো ভালই। আমরা
নিশ্চিন্তে কনে খুজতে
পারি। তা কেমন বৌ চাই
রাজা বাবু?” অমিত বুঝলো বৌদিকে
কাটাতে না পারলে তার
কপালে খারাবী আছে। তাই
পাল্টা আক্রমনের কৌশল করে
বললো, “তোমার মত।” মূহুর্তে চোখ কপালে উঠে গেল
বিন্দুর। অমিতের পিছনের
আয়নায় সে নিজেকে দেখতে
পাচ্ছে। কত হবে বয়স?
অমিতের চে সামান্য ছোট
হবারই সম্ভাবনা। ফর্সা সুন্দর আটোসাটো শরীর।
বাচ্ছা কাচ্ছা হয়নি বলে
এখনও কুমারী মেয়েদের আদল যায়নি। যে কোন পুরুষ তাকে
দেখলে দ্বিতীয়বার তাকাতে
বাধ্য। “আমার মতো?” “হ্যা তোমার মত” “আমার মত পেত্নী বিয়ে
করবে কেন তুমি? তোমার জন্য
আমি রাজ কুমারী খুজেঁ
আনবো।” “তার মানে আমাকে কুর্নিশ
করতে করতে ঘরে ঢুকতে
হবে।” “জ্বী না তোমাকেই কুর্নিশ
করবে। মেয়েদের কুর্নিশ করাতে জানতে হয় ।” বিন্দু অমিতের নাক টিপে
দিল। “এসব আমি কেমন করে
জানবো?” “সময় আসুক, না হয় আমিই
শিখিয়ে দেব? এবার ঘুমাও।” অমিতের মাথার চুলগুলো
এলোমেলো করে দিল বিন্দু।
এগিয়ে এসে চুমো খেল
কপালে। তার পর চলে গেল।
খুব সাবলীল। কোন পাপ, কোন
জড়তা বা কামনা চোখে পড়লো না। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ
করছে অমিত। তার ঘুম আসছে
না। কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল
সে দেশে আছে। এত কাছে তবু
অঞ্জলীর সাথে দেখা হচ্ছে
না। জীবনটা এত জটিল কেন? অমিত কিছুতেই অঞ্জলীকে
চোখ থেকে সরাতে পারছে
না। হঠাত করেই মোবাইল
বাজলো। ম্যাগীর ফোন।
“হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে
ম্যাগীর চাপা গলা শুনা
গেল। “যে খানেই থাকো
রাতে সাবধানে থেকো। আমি আততায়ী আশংকা করছি।”
লাইন কেটে গেল। এ ধরণের ফোনের ক্ষেত্রে কল
ব্যাক করতে মানা আছে।
হয়তো কেউ ওয়াচ করছে।
সামান্য সুযোগে কথা বলেছে
ম্যাগী। মেয়েটার বুদ্ধি খুব
তীক্ষ্ণ। ম্যাগী সতর্ক করার মানে হল সতর্ক হতে হবে।
অমিত আত্ম প্রকাশ করার
আগেই মনি শংকরের কাছে
পৌছে গেছে। কল লিস্ট থেকে
ম্যাগীর নামটা মুছে দিয়ে
বিছানার উপর উঠে বসলো অমিত। না আসা ঘুম আরো দূরে
চলে গেল। ঘরের সব লাইট অফ
করে দিলো। কোল
বালিশটাকে বিছানায়
রাখলো একদম মানুষের মত
করে। চাদর দিয়ে ঢেকে দিল। একটু দূর থেকে দেখলে
মনে হবে কেউ চাদর মুড়ি
দিয়ে শুয়ে আছে। ঘর ছেড়ে
বেরিয়ে এল অমিত। টোকা
দিল বন্যার দরজায়। কোন প্রশ্ন না করেই বন্যা
দরজা খুললো। তার ধারণা
ছিল মা এসেছে। কিন্তু
দরজায় অমিতকে দেখে চমকে
উঠলো। “ছোট কাকু তুমি?”
“হ্যা রে মা ঘুম আসছে না।” “এস এস ভিতরে এস।”
ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল
অমিত। রুমটা যে এত বড় তা
বাইরে থেকে বুঝার উপায়
নেই। খাট, পড়ার টেবিল,
মিউজিক সিস্টেম, কম্পিউটার সিস্টেম,
টেলিভিশন, জিম
এ্যাপারেটাস, ড্রেসিং
টেবিল, সোফাসেট কি নেই?
একদম স্বয়ং সম্পূর্ণ একটা
রুম। ঘরে ঢুকে সোফায় বসলো
অমিত। মাথাটা হেলান
দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকলো
চোখ বন্ধ করে। তাকে খুব
চিন্তিত মনে হচ্ছে।
“ছোট কাকু তোমার কি শরীর খারাপ?”
“না, আসলে কেন জানিনা ঘুম
আসছে না। একা একা বোর ফিল
করছিলাম।”
“ভালই হল। আমি আরও
ভাবছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। নইলে আমিই যেতাম।”
“কেন রে?”
“তোমার আমেরিকার গল্প
শুনবো বলে।”
“ঠিক আছে বলবো”
“জান ছোট কাকু, আমাদের পুরনো বাড়িটা না এখন অনাথ
আশ্রম হয়েছে। আমার
মাসিমনি সেটা চালায়।
মাসিমনিকে চেন তুমি?”
“এখন মনে করতে পারছি না,
তবে নিশ্চই চিনি।” “খুব সুন্দর। এই দেখ তার
ছবি।”
হাত বাড়িয়ে পড়ার টেবিল
থেকে একটা ফ্রেমে বাধানো
ছবি আনে বন্যা। স্টিল ছবি।
দু্ই পাশে অঞ্জলী আর মঞ্জূ মাঝখানে বন্যা। ক্যামেরার
দিকে তাকিয়ে আছে
হাসিমূখে। সদ্য তোলা ছবি।
অমিত তাকিয়ে দেখে। কিছু
বলে না। আসলে তার ভিতরে
ঝড় বইছে। এলো মেলো চিন্তার ঝড়। কোন কিছুই
নির্দিষ্ট করে ভাবতে
পারছে না ।
বন্যার চোখ এড়ায় না অমিত
অন্যমনস্ক। সে ছবিটা
সরিয়ে নেয়। তার মনে হয় অমিত খুব ক্লান্ত আর
চিন্তিত। বিশ্রাম দরকার।
সে অমিতের সোফার পিছনে
দাড়িয়ে কপালে হাত রাখে।
“ছোট কাকু, তুমি চোখ বুজে চুপ
করে শুয়ে থাক আমি ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। আরাম পাবে।” সত্যি সত্যি বন্যার সরু আর
নরোম আংগুলের ছোয়ায়
কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে
পড়ে অমিত। বন্যা তার
মাথাটা নামিয়ে এনে নীচে
একটা বালিশ দিয়ে দেয়। পা দুটো আলগোছে তুলে দেয়
সোফার উপর। নির্নিমেষ
তাকিয়ে থাকে বন্যা
অমিতের ঘুমন্ত মূখের দিকে।
অজান্তেই মূখ দিয়ে বেরিয়ে
আসে “হোয়াট অ্যা ম্যান!” ঘন্টাখানেক ঘুমিয়েছে
অমিত। তার চেতনায় ঘুমের
ঘোরেও সতর্কতা ছিল বলে
হঠাত করেই ঘুম ভেংগে গেল।
কে যেন তার বুকের উপর শুয়ে
আছে। নড়াচড়া না করে বুঝার চেষ্টা করলো। মূহুর্তেই মনে
পড়লো সে বন্যার ঘরে।
মোবাইলের আলোয় দেখল
মেয়েটা মেঝেতে বসে তার
বুকের উপর মাথা রেখে
ঘুমিয়ে পড়েছে। খুব সন্তর্পণে মাথাটা তুলে
ধরলো অমিত। তার পর পাজা
কোলা করে নিয়ে গেল
বিছানায়। ঘুম না ভাংগিয়ে
শুইয়ে দিল। চাদরটা টেনে
দিয়ে ফিরে এল সোফায়। মুচকি হাসি ফুটলো বন্যার
ঠোটে। অমিত জানেনা তাকে
পাঁজা কোলা করার সময়েই ঘুম
ভেংগে গেছে বন্যার।
তারপরও ঘুমের ভান করে
দেখতে চেয়েছে কি করে অমিত। অন্ধকার ঘরে একটা
সোমত্ত মেয়েকে বুকের উপর
পেয়েও ভাবান্তর হয়নি। এই
না হলে প্রিন্স। ছোট বেলা
থেকে যার গল্প কেবল শুনেই
আসছে। দেখার সুযোগ হয়নি। আজ যখন হল তখন সত্যি সত্যি
গর্বে বুকটা ভরে গেল তার। আরও ঘন্টাখানেক পর অমিত
ফিরে এল নিজের রুমে। কিন্তু
বিছানায় গেল না। বাথ
রুমের দরজাটা আধ খোলা
রেখে বসে রইল কমোডের
উপর। এক সময় অধৈর্য হয়ে পড়লো সে। ম্যাগীকে মনে হল
ফালতু কথা বলেছে। তার পরও
বসে রইল। অপেক্ষা কষ্টকর ।
কিন্তু এর ফল সব সময়ই ভালো। ভোর রাতের দিকে এল ওরা।
সংখ্যায় তিন জন। কালো
কাপড়ে মূখ ঢাকা। পানির
পাইপ বেয়ে উঠেছে।
বারান্দার রেলিং টপকে
ভিতরে ঢুকলো। প্রথমে দরজা খোলার চেষ্টা করেছিল।
কিন্তু পারলো না। ছিটকানী
লাগানোর পরেও বাড়তি
সতর্কতা হিসাবে তলায়
কাঠের গুড়ি দিয়ে ঠেক দিয়ে
রেখেছে অমিত। দরজা খুলতে না পেরে করিডোরের দিকের
জানালার কাঁচ ভেংগে
ফেললো। পর পর তিনটে গুলি
করলো বিছানা লক্ষ্য করে। গত কিছু দিন টানা বৃষ্টি
হয়েছে। আজ দুপুরে একটু খানি
সূর্য়ের ঝলক দেখা দিয়েই
মিলিয়ে গেছে। গ্রামে
গঞ্জে বন্যার আভাষ। সন্ধ্যে
থেকে আবার আকাশের মূখ ভার। রাত বাড়ার সাথে
সাথে প্রথমে গুড়ি গুড়ি তার
পর মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
আশ্রমের দীঘির পাড়ে
বাধানো ঘাটে বসে আছে
অঞ্জলী। তার মন ভাল নেই। দীঘির জলে বৃষ্টির ফোটার
শব্দ একটানা শুনলে মনে হয়
কেউ গান গাইছে। কষ্টের
গান। বিরহের গান। “এ ভরা
ভাদর , মাহ ভাদর শূণ্য
মন্দির মোর।” গুন গুন করে মেঘদূত আবৃত্তি করছে।
দীঘির মতই টুই-টুম্বুর যৌবন
আজ শেষ পথে। ভাগ্য কি
নিষ্ঠুর খেলাটা্ই না খেলছে
ওকে নিয়ে। অনেক অনেকক্ষণ
ধরে ঘাটলায় বসে বৃষ্টিতে ভিজছে অঞ্জলী। মাথার উপর
বৃষ্টির ফোটা পড়ে কানের
পাশ, ভুরু, চোখের পাতা আর
থুতনি বেয়ে নীচে গড়িয়ে
পড়ছে। বৃষ্টির জলের সাথে
ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে যাচ্ছে অশ্রু জল। কিন্তু বুকের
কষ্ট তাতে বাড়ছে বৈ কমছে
না। মাঝরাতের পর ঘরে ফিরে এল
অঞ্জলী। আয়নার সামনে
দাড়িয়েঁ ভেজা কাপড়
ছাড়লো। একে একে সব। একটা
সূতাও নেই পরনে। এত সুন্দর
একটা শরীর। অথচ কারো কোন কাজে আসলো না। তোয়ালে
দিয়ে ভাল করে মাথা মুছলো।
খুব সুন্দর করে সাজলো। ব্রা
প্যান্টি পড়ে একটা
ট্রাকস্যুট চাপালো গায়ে।
মাঝ রাতে এমন উদ্ভট আচরণ বোধগম্য নয়। পায়ে স্নীকার
পড়লো। পিস্তলটা নিল।
সাতে একটা স্পেয়ার
ম্যাগজিন। ট্র্যাক স্যুটের
উপর রেইন কোট চাপালো।
অন্ধকার রাতের সাথে কালো রেইন কোট মিশে গেল
একাকার হয়ে। গাড়ি চালিয়ে চলে এল
রোহিতের বাড়ির সামনে।
মাইলখানেক দূর থেকেই
গাড়ির হেড লাইট অফ করে
দিয়ে ভুতের মত এগিয়ে এল।
পার্ক করলো মেইন রোডের পাশে সাইড রোডের একদম এক
কিনারায়। দুই লাইট
পোস্টের মাঝখানে অন্ধকার
মত স্থানে। গাড়ির রং ডার্ক
ব্লু। ফলে বিশেষ নজর দিয়ে
লক্ষ্য না করলে কেউ দেখতে পাবে না। টহল পুলিশের ভয়
আছে। তবে সেটা ম্যানেজ
করে নিয়েছে থানার তরুণ
ইন্সপেক্টর সুব্রতকে ফোন
করে। সুব্রত একসময় আশ্রমে
ছিল। অঞ্জলীকে মাতৃজ্ঞান করে। “আপনি নিশ্চিন্তে
বেড়াতে যান মিস। কেউ
কিচ্ছু বলবে না। যদি এসকর্ট
লাগে আমাকে বলবেন।”
“না না আমি শুধু একটু ঘুরে
বেড়াবো। বৃষ্টি ভেজা মাঝ রাতের শহর দেখা হয়নি
কখনও।”
প্রায় দুই ঘন্টা হলো অঞ্জলী
বসে আছে বাড়ির সামনের
রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে। বৃষ্টির বেগ আরও বেড়েছে । এক হাত দূরের জিনিসও দেখা
যায় না। অঞ্জলী নাইট গ্লাস
চোখে নিয়ে রোহিতের
বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
সে যে আসলে কেন এখানে
এসেছে, কি দেখতে চায় নিজেই জানে না। অমিত
রাতের বেলা বারান্দায়
আসবে আর সে দূর থেকে দেখতে
পাবে এমন পাগলামী শুধু
কল্পনাতেই মানায়। প্রেমিক
প্রেমিকারা মনে হয় আসলেই পাগল। সুনসান নীরবতার মাঝখানে
ক্লান্ত অঞ্জলী আবারও নাইট
গ্লাস তুললো। রাতের
অন্ধকার ভেদ করে তার
সামনে রোহিতের দোতলার
বারান্দা লাফ দিয়ে এগিয়ে এল। খোলা বারান্দার
রেলিং টপকাচ্ছে তিনজন মূখোশধারী লোক । মাই গড। কারা ওরা। পানির পাইপ
বেয়ে নেমে আসছে দ্রুত।
লাইট না জ্বালিয়ে গাড়ি
স্টার্ট দিল অঞ্জলী। যারাই
হোক তাদের এ পথ দিয়েই
যেতে হবে। একটা ছেলে জানালা দিয়ে
গুলি করছিল। বাকী দুজন
দুদিক থেকে তাকে কাভার
দিচ্ছিল। প্রথম গুলির পরই
চী****তকার শুনতে পেল
আতাতায়ীর দল। খুব জোরে নয় তবে মরণ চীতকার।
হকচকিয়ে গেল তারা।
সেকেন্ডের ব্যবধানে আরো
দুটি গুলি করলো। তারপর
রেলিঙ টপকে পানির পাইপ
বেয়ে নেমে গেল। লোকগুলির রেলিঙ টপকানো
পর্যন্ত অপেক্ষা করলো
অমিত। তার পর বাথরুম থেকে
বেরিয়ে দরজা খুলে
বারান্দায় এসে উকি দিল।
একটা গাড়ি স্টার্ট নেবার আওয়াজ পেল অমিত।
পালাচ্ছে ওরা। মিশন সফল
করে পালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে
গা কাঁটা দিল তার। বেঁচে
আছে এ আনন্দে ঈশ্বরকে
ধন্যবাদ দিল। ম্যাগী সাবধান না করলে আজ মরে ভুত
হয়ে থাকতো অমিত। প্রথম
গুলির মাজল ফ্লাশ দেখে
বুদ্ধি করে চীতকার
করেছিল। তাই আততায়ীরা
বুঝতে পারেনি চাদরের তলায় অমিত নয় বালিশ
রয়েছে। পড়িমড়ি করে পালাচ্ছে
আততায়ীর দল। লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ি । কখন যে স্টাট বন্ধ হয়ে যায় তার ঠিক নেই।
লাইট জ্বালাতে পারছে না
ধরা পড়ার ভয়ে। খুব দ্রুত
মেইন রোডে উঠে এল। টের
পেল না তাদের পিছনে
পিছনে আসছে অঞ্জলীর গাড়ি। এটারও লাইট অফ।
লেটেস্ট মডেলের আধুনিক
গাড়ি। নিঃশব্দ ইঞ্জিন।
বেশ দূরত্ব রেখে ফলো করছে
অঞ্জলী। ফাঁকা রাস্তায়
ঝড়ের বেগে পালাচ্ছে ওরা। পেছনে আঠার মত অঞ্জলীর
গাড়ি। মিনিট বিশেকের
মধ্যে গাড়িটা রায়
টেক্সটাইলের প্রাইভেট
রাস্তার দিকে বাক নিল।
মূহুর্তেই সিদ্ধান্ত নিল অঞ্জলী। গতি বাড়িয়ে
আচমকা যমদূতের মত পিছন
থেকে ধাক্কা মারলো।
গাড়িটা উল্টে রাস্তা থেকে
খাদের দিকে গড়াতে
লাগলো। সাঁ করে বেরিয়ে গেল অঞ্জলী। তার নিজের
গাড়িতে এমন কি একটা আঁচড়ও
লাগেনি। যদি লোকগুলি
বেঁচে থাকে তো ভাল। মরে
গেলেও তার বিন্দুমাত্র
ভ্রুক্ষেপ নেই। গাড়ি চালিয়ে ঘোর পথে চলে এল
আশ্রমে। ভোর হতে আর বাকী
নেই তেমন। আশ্রম জাগবে
এখুনি। হতভম্ব অমিত বুঝতে পারছে
না তার কি করা উচিত। পর্দা
টেনে দিয়ে রুমের লাইট
জ্বালালো সে। চাদর বা কোল
বালিশে কোন ছিদ্র নেই।
তিনটে বুলেটই বিপরীত দিকের দেয়ালে ঠুকে চল্টা
তুলে চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে আছে।
তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে
আততায়ীরা গুলি করেছিল
এটা কি প্রকাশ করবে সে
বাড়ির লোকদের কাছে? নাকি চেপে যাবে? অনেক ভেবে
চিন্তে চেপে যাওয়াই স্থির
করলো। বুঝতে হবে কার কি
প্রতিক্রিয়া। কাউকে সতর্ক
করতে চায় না সে। খুব ভোরে উঠার অভ্যাস
বন্যার। আজ বেশী রাতে
ঘুমানোর কারণে তখনও
ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম ভাংলো
ফোনের শব্দে। এ অসময়ে ফোন
পেয়ে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল তার। চোখ বন্ধ রেখেই
খিস্তি দিল “হু ইজ দ্যাট
বোগাস?” “গুড মর্নিং বন্য, মাসিমনি
বলছি।” “তুমি এত সকালে?” আড়মোড়া
ভেংগে হাই তুললো বন্যা।
“বলেছি না আমাকে বন্য
বলবে না।” “হা হা হা ঠিক আছে বন্য আর
তোমাকে বন্য বলবো না।” “মাসিমনি আবার? কেন ফোন
দিয়েছ বলো।” “না মানে কাল তো তোরা
অনেক আনন্দ ফুর্তি করলি।
ভাবলাম একটু খবর নেই।” “ফুর্তি না ছাই। খেয়েদেয়ে
সবাই টুক করে ঘুমিয়ে পড়লো।
কাকুর সাথে একটু গল্প করবো
তাও হলো না।” “এত পথ জার্নি করে এসেছেন
ক্লান্ত ছিলেন নিশ্চই।” “জানো মাসিমনি রাতের
বেলা না কাকু আমার ঘরে
এসেছিল।” হরবর করে রাতে
যা কিছু ঘটেছে সব বললো
অঞ্জলীকে। সব শুনে অঞ্জলী বললো, “তা
তোমার এ বিখ্যাত কাকুর
সাথে আমাকে একটু আলাপ
পরিচয় করিয়ে দাও!” “চলে এস একসাথে ব্রেক
ফাস্ট করবো।”
ভয়ে, আতংকে, অস্থিরাতায়
কাতর হয়ে আছে অমিত। এ কি
সর্বনাশা খেলার মূখে
পড়লো। কে তাকে হত্যা করতে চায়? মেজদা এতটা নীচে
নেমে গেল সম্পত্তির লোভে?
অথচ কাল রাতেও তাকে ছোট
বেলার মত মাছের কাঁটা
বেছে দিয়েছে। মানুষের
আলো আর অন্ধকারের চেহারায় এত ফারাক কেন?
এজন্যই কি ঠাকুরমা তার
দেশে আসার ব্যাপারে
নিস্পৃহ ছিলেন? এজন্যই কি
পিসিমা তাকে দ্রুত দেশ
ছাড়তে বলেছিলেন? কার কাছে যাবে অমিত? কে আছে
বান্ধব? তার কেবলই মনে হতে লাগল এ
দুঃসময়ে একজন বান্ধব খুব
বেশী দরকার। ম্যাগী তার
জন্য জীবন দিয়ে দেবে।
কিন্তু বাইরের মানুষ হওয়ায়
তেমন কাজে আসবে না। আত্মীয়দের কারো উপরেই
ভরসা রাখতে পারছে না।
অমিত কি ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে
যাবে? কোথায় যাবে অমিত?
কে আছে স্বজন? আছে। স্বজন আছে। তার মনের
ভিতর থেকেই কে যেন বললো।
দুঃসময়ের সাথী অঞ্জলী
আছে। জীবনটা যখন বখে
যাওয়ার পথে ছিল তখন তার
মমতা আর ভালবাসাই অমিতকে আজকের পর্যায়ে
এনেছে। ঠাকুরমার অঢেল
টাকাকড়ি তার কোনই কাজে
আসেনি। কিন্তু অঞ্জলীর
বুকভরা ভালবাসা তাকে
ট্র্যাকে ফিরিয়ে এনেছিল। আজকের অমিত সে তো
অঞ্জলীরই অবদান। তার
কাছেই যাবে অমিত। একটা
সাপোর্ট আর একটা নিরাপদ
আশ্রয় দরকার। বড়দা তার কালো
শেভ্রোলেটা ছেড়ে দিয়েছে।
ড্রাইভারকে গাড়ি বের
করতে বলে খুব তাড়াতাড়ি
তৈরী হলো অমিত। বাইরে
গরম। জিনস আর ফতোয়া পরলো। পায়ে রাবার সোলের
কেডস। খুবই ক্যাজুয়াল।
আয়নায় একবার দেখে নিল।
মন্দ না। ফর্সা ভরাট
স্বাস্থ্যের মানুষ। যা পরে
তাতেই মানায়। একটা আর্মস থাকলে একটু সেইফ বোধ
করতো। কিন্তু এদেশে তার
লাইসেন্স নেই। গাড়ির
কাছে এসে কি মনে করে
ড্রাইভারকে ছেড়ে দিল।
নিজেই ড্রাইভ করবে। ড্রাইভার কাচুমাচু করছিল।
“বড় স্যার রাগ করবেন”
ইত্যাদি বলে। কিন্তু অমিত
কাটিয়ে দিয়েছে। আশ্রমের গেইটে এখনও পুরনো
দারোয়ান রামলাল ডিউটি
করে। দারোয়ান হলেও এ
বাড়িতে তাকে যথেষ্ট
সম্মান করা হতো। ছোট
বেলায় অমিত তার কাঁধে পিঠে চড়েছে। হর্ন
বাজাতেই রামলাল গাড়ির
কাছে এসে সেলাম ঠুকে বললো,
“কার কাছে যাবেন বাবুজী?”
বয়স হয়েছে রামলালের।
কিন্তু এখনও শক্ত সমর্থ। এক্স আর্মি ম্যান। একদম কেতা
দুরস্ত।
“রামু কাকা, আমি অমিত,
আমাকে চিনতে পারছো না?”
গাড়ির কাচ নামিয়ে অমিত
গলা বাড়ায়। রামলাল চিনতে পারে না।
তরুণ অমিতের সাথে এ লোকের
অনেক তফাত। মূখ ভর্তি দাড়ি
থাকায় আরও বেশী অচেনা
লাগে। রামলাল অসহায়
ভংগী করে। “আমি চিনতে পারছি না বাবুজী, আমাকে
বলেন আপনি কার কাছে
যাবেন?”
“অঞ্জলীর কাছে যাবো।”
“মা জননী তো খুব সকাল বেলা
বেরিয়ে গেছেন। আপনি তার অফিসে বসুন।”
এধরণের সমস্যা অমিতের
মাথায় ছিল না। রামলাল
তার দায়িত্বে অটল। কেউ
এসে যতক্ষণ পরিচয় নিশ্চিত
না করবে ততক্ষণ সে মানবে না। তবে খুব সম্মান করে
অফিস রুমে বসতে দিল।
রিসেপশনে সুদীপাকে
জানিয়ে গেল ইনি মা জননীর
মেহমান।
সুদীপা মেয়েটি বুদ্ধিমতী আর স্মার্ট। সে অমিতকে কফি
দিল। তার পর অন্য রুমে গিয়ে
অঞ্জলীকে ফোন দিল। “ম্যাডাম আমি যদি ভুল না
করে থাকি ভদ্রলোক বিদেশী
সাংবাদিক মহিলার
হাজবেন্ড আব্রাহাম গোমেজ।
কিন্তু এখন বলছেন তার নাম
অমিতাভ রায় চৌধুরী। আমি বুঝতে পারছি না আমার কি
করণীয়।” “তুমি সার্বক্ষণিক তার
কাছাকাছি থাক। তিনি
যেখানে যেতে চান, যা করতে
চান মানা করো না। আমি
আসছি।” অঞ্জলী ড্রাইভারকে
গাড়ি ঘোরাতে বলল। সে যাচ্ছিল রোহিতের বাড়িতে।
অমিতকে দেখবে বলে। এখন
ম্যাগীর বাসার পথ ধরলো। সুদীপা রাখতেই অঞ্জলী
ম্যাগীকে ফোন দিল।
“ম্যাগী তুমি কি একবার
আশ্রমে আসবে? আমার জরুরী
দরকার। বিপদে পড়েছি
তোমার সাহায্য লাগবে।” “ঠিক আছে আমি আসছি।”
“রেডি হও পাঁচ মিনিটের
মধ্যে আমি তোমাকে পিক
করবো” ম্যাগী সকাল থেকে
অসংখ্যবার অমিতকে ট্রাই
করেছে। কিন্তু পাচ্ছে না।
অমিতের ফোন সুইচড অফ।
আসলে রাতের বেলার
আততায়ী হামলার আগে আগে অমিত ফোনের সুইচ অফ করে
রেখেছিল যাতে আচমকা
বেজে উঠে তার অবস্থান ধরা
না পড়ে। উত্তেজনা আর
অস্থিরতায় অন করতে ভুলে
গেছে। ম্যাগী খুব ভয় পেয়ে গেল। অমিতের কিছু হয়নি
তো? অমিত কে পাওয়া যাচ্ছে
না আবার অঞ্জলীর জরুরী
ফোন। সে দ্রুত সিড়ি বেয়ে
নেমে এল। নীচে আসতেই
দেখল অঞ্জলীর গাড়ি ব্রেক কষছে। ঠিক দশ মিনিটের
মাথায় আশ্রমে পৌছে গেল
তারা। ম্যাগীকে সাথে
নিয়ে খুব দ্রুত বেগে অফিস
রুমে ঢুকলো অঞ্জলী। ভুল সবই ভুল
অঞ্জলীর অনুপ্রবেশ অমিত
টের পেলো না। সে নিবিষ্ট
মনে দেয়ালের কিছু ছবির
দিকে তাকিয়ে আছে। একটা
ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাড়ির লনে অঞ্জলীর সাথে সে
ব্যাডমিন্টন খেলছে। রায়
পরিবারের অভ্যন্তরীণ
প্রতিযোগিতা। ঠাকুরমা
থেকে শুরু করে সকলে অংশ
গ্রহণ করতো। সে বার সিংগেলস এ ফাইনাল
খেলেছিল অমিত আর অঞ্জলী।
এটা তারই ছবি। অমিত
চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। খুব
স্মৃতি কাতর নস্টালজিক
ছবি। “কেমন আছ অমিত?” অঞ্জলী
কথা বললো। অবিকল ম্যাগীর
গলায়। “ম্যাগী তুমি?” বলতে বলতে
ঘুরলো অমিত এবং অঞ্জলীকে
দেখে ভুত দেখার মত চমকে
উঠলো। “ভয় পেয়ো না ম্যাগীও
আছে।” অঞ্জলী সামনে থেকে
সরে দাড়াতেই ম্যাগীকে
দেখতে পেল অমিত। “না মানে ইয়ে ” আকস্মিক
ম্যাগীর কন্ঠ শুনে আর
অঞ্জলীকে দেখে অমিতের
হতভম্ব ভাব এখনও কাটেনি।
সে বুঝতে পারছেনা কি
বলবে। “এসবের কোন দরকার ছিল না
অমিত। বউ নিয়ে অনেক আগেই
তুমি দেশে এসেছ। আশ্রমে
ঢুকেছ নাম ভাড়িয়ে। বিয়ের
কথাটা গোপন রেখেছ। আসলে
কার কাছ থেকে কি লুকাতে চাইছ তুমি আমি জানিনা।” “তুমি যা বলছ সেটা ঠিক নয়
অঞ্জলী।” অমিত নিজেকে
ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে। “কোনটা ঠিক আর কোনটা না এ
নিয়ে তর্ক করতে চাইনা
অমিত। তুমি কেমন আছ বল।”
অঞ্জলীর কন্ঠ নিরুত্তাপ। “ভাল” হঠাত গম্ভীর হয়ে
যায় অমিত। অঞ্জলীর নিস্পৃহ
আচরণ তার ভাল লাগছে না। “নাস্তা হয়নি এখনও তাই
না?” চলো আমারও ক্ষিধে
পেয়েছে। “ভাল কথা তোমার
বউ খুব সুন্দর হয়েছে। আমার
খুব ভাল লেগেছে ওকে।
কনগ্রাচুলেশন।” “অঞ্জলী, তোমার একটা ভুল
হচ্ছে।” এবার ম্যাগী কথা
বলে। “শুন মেয়ে, পরিচয়ের আগে যা
বলেছ, যা করেছ তা ভুলে
যাও। আমি তোমার বরের
তালতো দিদি। তুমিও আমাকে
দিদি বলবে। এ দেশে এটাই
নিয়ম।” “অঞ্জলী তুমি কারো কথা
শুনতে চাইছো না কেন?”
অমিতের রাগ গলায় প্রকাশ
পায়নি এখনও। “আমার যত টুকু মনে পড়ে তুমি
আমাকে দিদি বলতে।
আমেরিকান পরিবর্তনটা
আমার ভাল লাগছে না। এস
নাস্তা করবে।” অঞ্জলী তার
ভিতরের আবেগটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। “কর্মচারীদের সাথে বসে
আমি নাস্তা করি না।”
অমিতের মাথায় হঠাত রক্ত
চড়ে গেছে। অঞ্জলীর এমন
আচরণ তার কাছে প্রত্যাশিত
নয়। “অনাথ আশ্রম রায় গ্রুপের
কোন প্রতিষ্ঠান নয় মিঃ
চৌধুরী। রায় গ্রুপ এর ডোনর
মাত্র। এমন ডোনর আরও অনেক
আছে।” অঞ্জলী অমিতের রাগটাকে
আরো উস্কে দিতে চাইছে।
কারণ অতীতের কোন
সম্পর্কের স্মৃতি তার
দাম্পত্য জীবনে ছায়া ফেলুক
এটা অঞ্জলী চায় না। মানুষটা সুখী হোক। তার
নিজের কষ্টটাকে বুকের
ভিতরেই চাপা দিল অঞ্জলী্।
যে সম্মান আর যে ভালবাসা এ
যুবকের কাছ থেকে পেয়েছে এ
স্মুতিটুকু নিজের করেই অঞ্জলী বাকী জীবনটা
কাটিয়ে দিতে পারবে। আজ
ঠাকুর মা নেই। তার আশ্রয়ে
অঞ্জলী আজ সমাজে মাথা উচু
করে বাঁচতে পারছে। সেই
কৃতজ্ঞতা সে ভুলবে কেমন করে? হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামাতে
পারছে না সে। ইচ্ছে করছে
অমিতকে বুকের মাঝে জড়িয়ে
ধরে চুমোয় চুমোয় পাগল করে
দিতে। কাল সারা রাত
বাইরে বাইরে কাটিয়েছে। একনজর দেখার জন্য ঘন্টার
পর ঘন্টা রাস্তায় বসে
থেকেছে। এখন তার স্বপ্নের
রাজকুমারকে সামনে পেয়েও
তার কাছে যেতে পারছে না।
হাহাকার করা কান্নার আওয়াজ বুকের ছাতি ভেদ করে
বেরিয়ে আসতে চাইছে। মনে
মনে প্রতিজ্ঞা করে অঞ্জলী
কোন ভাবেই দূর্বলতাকে
প্রশ্রয় দিলে চলবে না। যে
সুখে আছে তাকে সে রকম থাকতে দিতে হবে। অঞ্জলীর পাল্টা আক্রমণে
দিশেহারা বোধ করছে
অমিত। তার সবচে বেশী রাগ
হচ্ছে ম্যাগীর উপর। গবেট
মেয়েটাই তাকে ধারণা
দিয়েছে অঞ্জলী তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে জন্যই
এমন পাগলের মত ছুটে এসেছে
তার কাছে। কিন্তু অঞ্জলীর
এমন নিস্পৃহ আচরণ চোখে
আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে
অমিত তার কেউ নয়। অতীত এখন কেবলই অতীত। অঞ্জলীর
কথায় তীব্র অপমানিত বোধ
করে অমিত। তার নীল রক্তে
বিস্ফোরণ ঘটে। “ওয়েল মিস্ চ্যাটার্জী, আই
এম সরি ফর মাই
ইগনোরেন্স।” তার গলা গম
গম করে উঠে। “ম্যাগী চলো”
খপ করে ম্যাগীর হাত ধরে
টান দেয় অমিত। আচমকা টানে অমিতের বুকের উপর
এসে পড়ে ম্যাগী। তাকে বাম
বগলের সাথে চেপে ধরে ঘর
ছেড়ে বেরিয়ে যায় অমিত।
নিজেকে আর ধরে রাখতে
পারে না অঞ্জলী। হু হু করে কান্নায় ভেংগে পড়ে। আর কত
পরীক্ষা নেবে ঠাকুর! “ম্যাডাম” ইন্টারকমে
সুদীপা।
“বল সুদীপা”
“অতিথিরা চলে গেছেন।
আজকের পেপারে রায় গ্রুপের
একটা খবর আছে।” “পাঠিয়ে দাও।” “পিকআপ ভ্যান এ হামলা ঃ
কর্মচারী আহত” শিরোনামে
স্থানীয় একটা পত্রিকায়
সংবাদ বেরিয়েছে। নিজস্ব
সংবাদদাতার বরাত দিয়ে
বলা হয়েছে গত রাত ভোরের কিছু আগে মালামাল
পরিবহনের সময় রায় গ্রুপের
একটি পিকআপভ্যান
ছিনতাইকারীদের কবলে
পড়ে। তারা কর্মচারীদের
মারধর করে মালামাল লুটে নিয়ে যায়। চলে যাবার সময়
তারা গাড়িটাকে ধাক্কা
মেরে পাশের খাদে ফেলে
দেয়। গাড়িটাতে অনেক
মূল্যবান ফেব্রিক্স ছিল।
যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। আহত
কর্মচারীদের একজনের
অবস্থা আশংকাজনক। দুজনকে
প্রাথমিক চিকিতসার পর
ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দেশের
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খবরে উদ্বেগ প্রকাশ
করা হয়েছে। খবরটা খুব তা্তপর্যপূর্ণ। এ
ঘটনার আড়াল দিয়ে লাখ
পাচেক টাকার মাল সরানোর
একটা সুযোগ পেল অসত
কর্মচারীদের একটা গ্রুপ।
তারা জামাই বাবুর বাড়ির রেলিঙ এ কেন গিয়েছিল, কেন
এমন পড়িমড়ি করে
পালাচ্ছিল তার কোন
ব্যাখ্যা খুজেঁ পায় না
অঞ্জলী। সে যখন ধাক্কা দেয়
পিকআপটাতে কোন মাল সামানা ছিল না। জামাই
বাবুকে বিষয়টা জানানো
দরকার। ফোন তুলতে গিযে
আবার রেখে দিল অঞ্জলী।
কারণ এতে ধাক্কার সাথে সে
জড়িয়ে পড়বে। সুব্রতকে ফোন দিল সে।
ওপাশ থেকে সুব্রতর গলা
পেতেই বললো, “আজকের
পেপারে রায় গ্রুপের
বিষয়টা দেখেছ?”
“ইয়েস মিস। “আমার কেন জানি ধারণা
এক্সিডেন্টটা সাজানোও হতে
পারে। এর আড়ালে কেউ
মালামাল সরাচ্ছে।”
“এনি ক্লু মিস?”
“না নিছক আমার অনুমান। ভাল কথা রায় টেক্সটাইল এর
মূল মালিক অমিতাভ রায়
চৌধুরী এখন দেশে আছেন,
জান?”
“ইয়েস মিস। উপরতলার
লোকদের খবর আমাদের রাখতেই হয়।”
“কোন যোগসূত্র খুজেঁ পাচ্ছ?”
“আপনি বলতে চাইছেন
আশ্রমে অনুপ্রবেশ, মনি শংকর
বাবুর উপর হামলা, অমিত
বাবুর দেশে ফেরা আর আজকের এ ভ্যান লুট এসবের মাঝে কোন
যোগসূত্র আছে কিনা?”
“তুমি আগের মতই বুদ্ধিমান
আছ, নষ্ট হওনি।”
“আপনার আশীর্বাদ মিস।
“আর একটা কথা, বড়লোকদের অনেক অচেনা শত্রু থাকে।
আমি অমিতের নিরাপত্তা
নিয়ে ভাবছি।”
“আমি একটা চোখ রাখবো
মিস।”
“থ্যাংকিউ বেটা, মামনির কাছে চা খেয়ে যেও।” সারা রাস্তা গাড়িতে কোন
কথা বললো না অমিত। খুব
রেগে আছে। ম্যাগী পড়েছে
উভয় সংকটে। অঞ্জলী বা
অমিত কেউ তাকে বিশ্বাস
করছে না। মেজাজ বিগড়ে আছে তারও। পুরো ঘটনার জন্য
নিজেকে দায়ী ভাবছে সে।
ফোন করে জানিয়ে দিল আজ
অফিসে যেতে পারবে না।
অমিতকে বললো, “হোটেলে
চল।” হোটেলই তার অস্থায়ী
নিবাস। মনি শংকর বলেছিল
ফ্লাটের ব্যবস্থা করে
দেবে। কিন্তু ম্যাগী মানা
করে দিয়েছে। অল্প দিনের
বিষয়। হোটেলে ফিরে অমিতের কাছ থেকে আততায়ী
আক্রমণের কথা শুনে ঘাবড়ে
গেল ম্যাগী। তার আশংকাই
সত্যে পরিণত হয়েছে।
“শুন তোমাকে সাবধানে
থাকতে হবে।” “আমার একটা আর্মস দরকার
ছিল, খুব অসহায় বোধ করছি।”
অমিত বললো।
“আমারটা নেবে? সব জায়গায়
ডিক্লেয়ার করা আছে।”
“কিন্তু এটা আমি ইউজ করলে বেআইনী হয়ে যাবে। বরং
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে একটা
দরখাস্ত করি।”
“গুড আইডিয়া, তোমার
আমেরিকান পাসপোর্ট আছে।
আমি দুতাবাসকে দিয়ে তদ্বির করাতে পারবো।” ইতোমধ্যে নাস্তা চলে
এসেছে। ম্যাগী হোটেলে
ফিরে আগে রুমসার্ভিসকে
ফোন করে নাস্তার কথা
বলেছিল। অমিত খেতে বসে
খেতে পারলো না। রাতের ঘটনার পর সকালে অঞ্জলীর
আচরণ সব মিলিয়ে তার ক্ষুধা
তৃষ্ণার অনুভুতি লোপ
পেয়েছে। “তুমি এত ভেঙ্গে পড়ছো কেন?
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।” “কিছুই ঠিক হবে না। আমার
এক জীবনের অপেক্ষা বৃথা
হয়ে গেল। যে মানুষটাকে
আমি রেখে গিয়েছিলাম তার
ছিটে ফোটাও এখনকার
অঞ্জলীর মাঝে নেই। আমার একটুখানি হাসি মূখের
বিনিময়ে সে নিজের জীবন
দিয়ে দিতে পারতো।” “আজও তাই দিচেছ। শুধু তুমি
বুঝতে পারছো না। শুন, তোমার
এখানে বেশীক্ষণ থাকা ঠিক
হবে না। মনি শংকরের
অফিসের লোকজন এটা চেনে।
তোমার সাথে আমার যোগাযোগটা আরও কিছু দিন
গোপন রাখতে চাই। হিল্টনে
তোমার জন্য একটা রুম বুক
করছি।” “গোপন রইল কোথায়?
অঞ্জলীতো সবটাই জানে।”
“জানে না, অনুমান করেছে।
সেটা নিশ্চিত হবার জন্যই
আমার গলা নকল করেছে সে।
রিসেপশনিস্ট মেয়েটা আগেরবার তোমাকে আমাকে
একসাথে দেখেছিল। ভুলটা
এখানেই হয়েছে।” “তা হলে এখন আর এসব গোপন
করে কি হবে?”
“তোমার কি ধারণা অঞ্জলী
জনে জনে বলে বেড়াবে তুমি
আমি স্বামী স্ত্রী হিসাবে
হোটেলে ছিলাম? মোটেও না। আমি আজই তার সাথে কথা
বলবো। তার ভুল ভাংগাবো।” “যা খুশী কর। আমার আর কিছুই
ভালো লাগছে না
Source: banglachoti.net.in